Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

অর্জন

“ দিন বদলের স্বপ্নে ইউডিসি উদ্যোক্তা হিসেবে আমার সাফল্যের গল্প 

ভূমিকাঃ

২০১০ সালের পূর্বের দিকে তাকালে আজকের শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা নাছির উদ্দিনকে তার গ্রামের মানুষ-জন তেমন ভাল চিনত না, আজ তার পাশে বসে গ্রামের সবাই ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করছেন। আমার পিতার নাম মোঃ আব্দুল হাকিম, মাতার নাম মোছাঃ হালিমা খাতুন, ঠিকানাঃ ১১নং আমতৈল ইউনিয়নের সরচাপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও আমার স্বপ্ন ছিল তথ্য প্রযুক্তিগত সেবায় গ্রামকে আলোকিত করে বাংলাদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আজ আমি বাস্তব রূপ দিয়ে সর্ব ক্ষেত্রে পেয়েছি সম্মানসহ অগণিত প্রশংসা। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প বাস্তবায়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) অন্যতম হাতিয়ার।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে নামি। সফলও হই। কিন্তু ভার্গ্যের নির্মম পরিহাস ইংলিশ অর্নাস তৃতীয় বর্ষে এসে টাকার অভাবে ধমকে যাই চরম হতাশ হয়ে পড়ি। এক সময় শুরু করি প্রাইভেট/টিউশনি। আয় বাড়ানোর চিন্তা থেকে ২০০৮ সালে একটা কম্পিউটার কিনি। টুকটাক কম্পিউট করতাম । ২০১১ সালে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োগ পাই।

 

ময়মনসিংহ জেলার ১৩টি উপজেলায় জেলা প্রশাসনের কর্মতৎপরতায় এবং সারা দেশের ন্যায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়। এসব তথ্য কেন্দ্রে এলাকার লোকজন বিভিন্ন সেবা নিয়ে উপকৃত হয় অনেকে বিদেশে থাকা আত্মীয় স্বজনের সাথে স্কাইপির মাধ্যমে ছবি দেখে খুশি হয়। ইতিমধ্যে শুরু হয় জি টু জি পদ্ধতিতে সরকারিভাবে মালয়েশিয়া প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন। তখন আমি আমার ইউনিয়নের ৪৫০ জনের অনলাইন প্রাক রেজিস্ট্রেশন করি। তাছাড়াও আমার পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন ১২নং স্বদেশী, ৯নং ধারা এবং ১০নং ধুরাইল ইউনিয়ণের মোট ৮৯০জনের রেজি করে লোকজনের নিকট ব্যপক পরচিতি পাই। বিএমইটির আওতায় প্রাক রেজি থেকে আমার ইউনিয়নের ৪জন এবং অন্যান্য ইউনিয়নের ৮জনসহ মোট ১২জন মালয়েশিয়ায়া পাড়ি জমায়। সেই থেকে আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

 

প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের সেবায় দৃঢ়তার সঙ্গে এমন প্রত্যয় হালুয়াঘাটের আমতৈল ইউনিয়নের জনসাধারনের মাঝে ছড়িয়ে পরে। ২০১০ সালেও গ্রামাঞ্চলে তথ্য প্রযুক্তির কোন ব্যবহার নেই, কেউ ভাবেনি এক নিমিষে বিদেশে ছেলের সাথে প্রযুক্তির ব্যবহারে সরাসরি কথা বলতে পারবে। অবশেষে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যখন বাস্তবে গ্রামাঞ্চলের মানুষের হাতের নাগালে চলে আসে, গ্রামের আধার সরে গিয়ে আলোকিত হতে থাকে জীবন ব্যবস্থা। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামের একজন শিক্ষিত যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সময় ও শ্রমখরচ করতে হবেনা, তাকে বুঝতে কষ্ট হয় না তথ্য প্রযুক্তি সেবায় ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ভূমিকা সম্পর্কে। সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হালুয়াঘাট উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী যেখানে ২০০৯ সালেও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কীত কোন ধারণা ছিলনা, কেউ বোঝেনি ছেলে-মেয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল হাতের নাগালে চলে আসবে। নিজের সম্পদের কাগজ পত্র তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে হাতে পাওয়া যাবে। গ্রামের জনগোষ্ঠীকে তথ্য প্রযুক্তির আদলে এনে প্রয়োজনীয় সেবা সমূহ কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রশাসনীক কাজ, ছেলে-মেয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলসহ জনগণ কেন্দ্রীক সেবা দোড়গোড়ায় নিশ্চিত করণে প্রচেষ্টার অধিক সফলতায় আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জনগণ কেন্দ্রীক সেবা সমূহ জনগণের দোড়গোড়ায় নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরীত করার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তথ্য প্রযুক্তিগত সেবার মাধ্যমে দ্রুত হয়ে উঠি সাধারন মানুষের আস্থা অর্জনের প্রতীক। আজ আমাকে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা  হিসেবে গ্রাম থেকে মন্ত্রনালয় পর্যন্ত সবাই ভুয়সী প্রসংশায় আবদ্ধ করেছেন সেই অচেনা তরুন যুবক আজ  সবার কাছে হালুয়াঘাট উপজেলার ১১নং আমতৈল ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাছির উদ্দিন পরিচিতি লাভ করে নিজেকে দক্ষ প্রযুক্তির কারিগর রুপে তৈরী করতে পেরেছে-যার অবদান একমাত্র উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন এবং প্রধানমন্ত্রীর কায্যালয়ের এটুআই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আমি তাদের অবদান আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরন করবো।

 

সাফল্যঃ

ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী সেবা সমূহ জনগণের দোড়গোড়ায় নিশ্চিত করার স্বীকৃতি স্বরূপ আমতৈল উডিসিউদ্যোক্তারুপে ২০১১ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে নির্বাচিত হই। এই সম্মানের উৎসাহে আমি নিজেকে আরও নতুন উদ্যমে করার জকা  ফলে আবারও একই বছরে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় উপজেলা প্রশাসন আমাকে  শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা পুরষ্কারে ভূষিত করেন।

 

সাম্প্রতিক সময়ে সদ্য বিভাগীয় মর্যাদাপ্রাপ্ত ময়মনসিংহ জেলার (বিভাগীয়) শ্রেষ্ট উদ্যোক্তা হিসেবে আমাকে পুরষ্কৃত করেন- বিভাগীয় প্রশাসনের সুযোগ্য কর্ণধার জনাব খলিলুর রহমান স্যার।  অন্যদিকে প্রযুক্তির ব্যবহারে মহূর্তের মধ্যে মানুষ তার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করার ফলে সাফল্যের ধারাবাহিতকায় আমাকে সকলক্ষেত্রে সম্মানিত করেছে। আমি প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ইউডিসির মাধ্যমে জনগণকেন্দ্রিক সেবা সমূহ আন্তরিকতার সাথে নিশ্চিত করায় ইউডিসির স্বচ্ছলতা সহ আমার জীবিকায় অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। গড়ে ১শ’ জনকে সেবা প্রদানের চিত্র ইউডিসি প্রকল্প অফিসে প্রতিবেদন আকারে আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী প্রেরণ করি। প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আমি আয় করেছি  প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।

 

এতদূর আসার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে তারা হলেন  উপজেলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান স্যার,  মোঃ হেললালুজ্জামান স্যার বর্তমানে  মোঃ জাকির হোসেনস্যারসহ আমতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান জনাব- মোঃ শফিকুর রহমান (শফিক) ও ইউপি সচিব আবুল কালাম আজাদ । আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার। যার মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে তাদের নিজের আয়ের উপর নির্ভশীল হয়ে দেশকে মানব সম্পদে পরিনত করে মাথাপিছু আয় বাড়াবে।